কয় দিন ধরে গলাব্যথায় ভুগছেন সাজ্জাদ (ছদ্মনাম)। ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না। কথা বলতেও ব্যথা বোধ হয়। এই গরমে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। ব্যাপারটি নিয়ে খুবই বিরক্ত তিনি।
এমন বিরক্তিকর অবস্থায় যে কেউ পড়তে পারেন এখন। একদিকে ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে আবহাওয়ার গতিবিধির ঠিক–ঠিকানা নেই। এই হয়তো প্রচণ্ড রোদে ঘামে ভিজে একসা হয়ে গেলেন, তো পরক্ষণেই ঝমঝমিয়ে নামল বৃষ্টি। আবার অনেকের বাসায় সব সময় এসি চালু থাকে। এই তারতম্যগুলোর সঙ্গে অনেক সময়ই শরীর তাল মিলিয়ে উঠতে পারে না। ফলে এ সময় সর্দি-কাশি-গলাব্যথার আশঙ্কা থাকে বেশি।
কেন হয় গলাব্যথা
গলাব্যথার মূল কারণ সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট প্রদাহ। টনসিল, নরম তালু, খাদ্যনালির ওপরের অংশ, জিহ্বার পেছনের অংশ প্রভৃতি অঙ্গ বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণে সংক্রমিত হতে পারে। তা থেকেই হতে পারে গলাব্যথা। এই গলাব্যথা হয় আকস্মিক। এর সঙ্গে পেটে ব্যথা হতে পারে। এমনকি খাবারের প্রতি আগ্রহও কমে যেতে পারে। শিশু-কিশোররা এতে বেশি আক্রান্ত হয়।
এই গরমে ভাইরাস ও অ্যালার্জির আক্রমণে গলাব্যথা হতে পারে। শুষ্ক আবহাওয়ার জন্যও অনেকের গলায় খুসখুসে ভাব হয়, যা গলাব্যথার কারণ হতে পারে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান, দূষিত বাতাস সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গলাব্যথা উপশমে যা করা যেতে পারে
হালকা গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। গলাব্যথায় চা অত্যন্ত কার্যকর উপশমকারী। আদা, আদার রস, লবঙ্গ, মধু প্রভৃতিও বেশ আরামদায়ক। এসবের পাশাপাশি নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন।
• গলাকে পূর্ণ বিশ্রাম দিন। কথা বলা, চিৎকার করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকুন।
• ঠান্ডা পানি পান করবেন না। সব সময় কুসুম গরম পানি পান করুন। গরম স্যুপ, গরম পানির সঙ্গে লেবু বা মধু মিশিয়ে খেলে বেশ আরাম পাবেন।
• চকলেট বা লজেনস চুষতে পারেন। গলাব্যথা উপশমে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এটি।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
গলাব্যথা হলে চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়াই অনেকে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন। এটি একদমই ঠিক নয়। বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা কিডনির সমস্যার মতো দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগ আছে, তাঁদের জন্য যেকোনো ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ লাগবেই। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে যখন—
• শ্বাসকষ্ট হলে
• ঢোক গিলতে কষ্ট হলে
• মুখ হা করতে এবং খাওয়া-দাওয়া করতে অসুবিধা হলে
• জ্বরের মাত্রা ১০১°ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে হলে
• ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে
• কানে ব্যথা হলে
• থু থু বা কাশির সঙ্গে রক্ত বের হলে
• গলার ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি সময় দীর্ঘ হলে
• গলার স্বরের পরিবর্তন হলে।
লেখক: নাক–কান–গলা বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন এবং কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্রঃ প্রথম আলো