ভূমিকা ; ধৈর্য ধরাে, ধৈর্য ধরাে। বাঁধাে বাধাে বুক শতদিকে শত দুঃখ আসুক আসুক। প্রতিটি কর্মে সাফল্য লাভ করাই মানবজীবনের অন্যতম। ব্রত। কিন্তু প্রতিটি কর্মেই মানুষ সাফল্য লাভ করতে পারে না। সফলতা যেমন জীবনকে উদ্ভাসিত করে, তেমনই মাঝে মাঝে বিফলতার অন্ধকারে তলিয়ে নিয়ে যায় মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা। তবুও মানুষ থেমে থাকে না। সে এগিয়ে যায় নতুন সাফল্যের সন্ধানে। অনেক সময়। একবারের চেষ্টায় সফলতা না এলে বারবার চেষ্টা করে অর্জিত হয় কাঙিক্ষত সফলতা। সাফল্য অর্জনের জন্য বারবার চেষ্টা করার নাম অধ্যবসায়। মানুষের সকল মহৎ গুণের মধ্যে অধ্যবসায়ই শ্রেষ্ঠ। এর মাধ্যমে সে অসাধ্যকে সাধন করে, পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যায় এক নতুন যুগে। জীবনের উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে অধ্যবসায়। সবচেয়ে নির্ভরযােগ্য সিড়ি। বিফলতার গ্লানি নিয়ে হতাশ হয়ে বসে। থাকলে মানুষের পক্ষে কোনাে দিনই মহৎ সৃষ্টি সম্ভব নয়। কোনাে | কাজে একবারের প্রচেষ্টায় সফল হতে না পারলে শতবার চেষ্টার। মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
অধ্যবসায়ের স্বরূপ : অধ্যবসায় মানে ধৈর্য ও সহিষ্ঠার মাধ্যমে সাফল্য। লাভের প্রচেষ্টা। আন্তরিকতা ও পরিশ্রমে পরিপূর্ণতা লাভ করে অধ্যবসায়। দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে বার বার চেষ্টার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে মানুষ। নিরাশা বা ব্যর্থতার এখানে কোনাে স্থান নেই। যতবারই ব্যর্থ হােক না কেন নতুন উদ্যমে কর্মে নিয়ােজিত হলে সাফল্য। আসবেই। কবির ভাষায়-
“পারিব না এ কথাটি বলিও না আর কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার। পারাে কি না পারাে করাে যতন আবার একবার না পারিলে দেখ শতবার।”
অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা : মানুষের জীবন ফুলের বিছানা নয়। সাফল্যই জীবনের একমাত্র ফল নয়। প্রতিটি কাজে যেমন আছে সাফল্য লাভের আশা, তেমনই আছে ব্যর্থতার সম্ভাবনা। কিন্তু ব্যর্থতায় ভীত হয়ে। বসে থাকলে চলবে না। বার বার চেষ্টা চালাতে থাকলে সাফল্য আসবেই। মেঘের আড়ালে সাময়িকভাবে সূর্য ঢাকা পড়লেও মেঘ কেটে গেলে সূর্য যেমন পুনরায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে; তেমনই সাময়িক ব্যর্থতার অন্ধকার জীবনকে ছেয়ে ফেললেও পুনঃপুন চেষ্টায় সাফল্যের সােনালি | আলােয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে জীবন। ব্যর্থতার ভয়ে পিছিয়ে না গিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে সাফল্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। যতবার ব্যর্থতা আসবে ততবারই নতুন উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে কর্মসাধনায়। তবে সাফল্য অবশ্যই আসবে। মনে রাখতে হবে- Failure is the pillar of success. ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি। জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে চাইলে প্রয়ােজন অধ্যবসায়। এই অনন্য গুণ মানুষকে করে তােলে স্বাবলম্বী, আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় মনােবলের অধিকারী। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবন হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ, সার্থক ও সুন্দর।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় : ছাত্রজীবন হলাে সমৃদ্ধ জীবন গঠনের মােক্ষম সময়। এ সময় অধ্যবসায় অপরিহার্য। শিক্ষাজীবনে অধ্যবসায়ী হতে পারলে সমগ্র জীবনে সাফল্যের দ্বার উন্মােচিত হয়। কঠোর অধ্যবসায়ের। মাধ্যমে ছাত্রজীবনে সাফল্য লাভ করতে পারলে জীবন হয়ে ওঠে সুখী ও সুর। একজন ছাত্র পরীক্ষায় খারাপ ফল করতে পারে। কিন্তু এতে। ভেঙে পড়লে চলবে না; নব উদ্যমে পড়াশােনায় মনােযােগী হতে হবে। এভাবে কঠোর অধ্যবসায় অবলম্বন করতে পারলে সে অবশ্যই কৃতকার্য। হবে। এভাবে যতবার ব্যর্থতা আসুক না কেন, ভেঙে না পড়ে নতুন উদ্দীপনায় লেখাপড়া করতে পারলে সাফল্য অবধারিত। তাই তাদের শ্লোগান হওয়া উচিত।
“আসবে পথে আঁধার নেমে
তাই বলে কি রইব থেমে?”
প্রতিভা ও অধ্যবসায় : অনেকে মনে করেন প্রতিভাই মানুষকে সফল করে তােলে। কিন্তু প্রতিটি মানুষই প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই বিকশিত হয় মানুষের অন্তর্নিহিত প্রতিভা। বিরল। প্রতিভার অধিকারী হয়েও কেউ যদি অধ্যবসায়ী না হন তবে সে। কিছুতেই সাফল্য লাভ করতে পারবে না। আবার তুলনামূলক কম। প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তির পক্ষেও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করা সম্ভব। অধ্যবসায় ছাড়া প্রতিভা অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই অধ্যবসায়ই প্রতিভার বিকাশ ঘটায়, সৃষ্টি করে মহৎ সাফল্য।
অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত : পৃথিবীর সকল মনীষীই জীবনভর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্যের আলােয় উদ্ভাসিত করেছেন পৃথিবীকে। সম্রাট নেপােলিয়ন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অর্ধ পৃথিবীর অধীশ্বর হয়েছিলেন। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও একমাত্র অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ফরাসি জাতির শ্রেষ্ঠ সঙানের মর্যাদা লাভ করেছেন তিনি। পৃথিবীর প্রতিটি মহৎ আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের কঠোর অধ্যবসায়ের কাহিনি। দিনের পর দিন ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ব্যর্থতার মুখােমুখি। দাড়িয়ে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তারা বদলে দিয়েছেন মানবসভ্যতার গতি-প্রকৃতি। অধ্যবসায়ের কারণেই মানুষ জয় করতে পেরেছে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত। অধ্যবসায়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ক্লন্স। ইংরেজদের হাতে রাজ্য হারিয়ে তিনি হতােদ্যম হয়ে পড়েননি। পর পর। ছয়বার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি কিছুটা হতাশ হলেন। | একদিন তিনি দেখলেন একটি মাকড়সা বার বার কড়িকাঠে জাল বিস্তারের চেষ্টা করে ছয়বার ব্যর্থ হয়ে সপ্তমবার সফল হয়েছে। রবার্ট বুস নতুন উদ্যমে সৈন্য সগ্রহ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজ্য উদ্বার। করেন। প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে কলম্বাস আবিষ্কার করেছেন। আমেরিকা। গ্যালিলিও, জেমস ওয়াট, জর্জ স্টিফেনসন, বার্নার্ড প্যালিসি, জগদীশচন্দ্র বসু, মার্কনি প্রমুখ বিজ্ঞানীর জীবনে ঘােষিত হয়েছে অধ্যবসায়ের বিজয় বার্তা।
উপসংহার : অধ্যবসায় মানুষকে করে তােলে অজেয়। সাফল্য লাভের একমাত্র পথ কঠোর অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ী না হলে সামান্য কাজেও। সফল হওয়া যায় না। অধ্যবসায়ের ওপর নির্ভর করে জীবনের সামগ্রিক সাফল্য ও ব্যর্থতা। আমাদের প্রত্যেকের উচিত অধ্যবসায়ী হয়ে জীবনে। সাফল্যের পথে অগ্রসর হওয়া।