গ্রন্থাগার হচ্ছে বইয়ের সংগ্রহশালা
গ্রন্থাগার হচ্ছে বইয়ের সংগ্রহশালা

গ্রন্থাগার হচ্ছে বইয়ের সংগ্রহশালা

গ্রন্থাগার হচ্ছে নানাধরনের বইয়ের সংগ্রহশালা। এখানে বইপত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও আদান-প্রদানের ব্যবস্থা থাকে। গ্রন্থাগারে সঞ্চিত থাকে মানুষের যুগযুগান্তরের চিন্তা ও জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ। গ্রন্থাগারের সঞ্চিত সম্পদ একদিকে বহন করে কালের সাক্ষ্য, অন্যদিকে মুছে দেয় অতীত আর বর্তমানের সীমারেখা।

গ্রন্থাগারের উদ্ভব

গ্রন্থাগারের ইতিহাস সুপ্রাচীন। বই উদ্ভাবনের অনেক আগেই গ্রন্থাগারের জন্ম। | প্রাচীনকালে বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ মৃঙ্কলকে লিখে রাখা হতাে। আড়াই হাজার বছরেরও আগে অ্যাসিরিয়ার রাজা আশুরবানিপাল মৃত্যলকের গ্রন্থাগার করেছিলেন। তাতে প্রায় ৩০ হাজার মৃত্যলক ছিল। প্রাচীনকালের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থাগার হচ্ছে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। সাধারণ পাঠাগার প্রথম গড়ে। ওঠে রােমে। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে রােমে ২৫টিরও বেশি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাদশাহ হারুনঅর-রশিদের পাঠাগারের বেশ নাম ছিল। এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে কনফুসিয়াস ও বুদ্ধের ধর্মাদর্শে প্রভাবিত সমাজ গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে এসেছে। মুসলিম বিশ্বে কর্দোভা, দামেস্ক ও বাগদাদেও বেশকিছু গ্রন্থাগার ছিল।

বিশ্বের বিখ্যাত কয়েকটি গ্রন্থাগার

বর্তমানে পথিবীর বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলাের মধ্যে এদেশের এশ মিউজিয়াম, ফ্রান্সের বিবলিওথিক ন্যাশনাল লাইব্রেরি, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযােগ্য। বাংলাদেশে ১৯৫৩ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি।

গ্রন্থাগারের শ্রেণিবিভাগ

গ্রন্থাগার ব্যক্তিগত হতে পারে, হতে পারে রাষ্ট্রীয়। সাধারণ গ্রন্থাগার সবার জন্যে উন্মুক্ত। পাঠকদের রুচি ও চাহিদার ভিন্নতা অনুযায়ী বিচিত্র গ্রন্থের সমাবেশ ঘটে সাধারণ পাঠাগারে। এখানে গ্রন্থের সংখ্যাও হয় প্রচুর। অন্যদিকে ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে ব্যক্তির অভিরুচিই প্রধান। এর কারণ, বিশেষ ধরনের বইয়ের প্রতি সগ্রাহকের আগ্রহ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ছাপাখানা আবিষ্কার হলে বই ছাপানাের কাজ সহজতর হয়। তখন থেকে পারিবারিক গ্রন্থাগার গড়ে উঠতে থাকে। গ্রন্থাগার বেসরকারি উদ্যোগে অর্থাৎ ক্লাব বা গােষ্ঠীর উদ্যোগেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও গ্রন্থাগার থাকে। অনেক অফিস-আদালতেও নিজস্ব গ্রন্থাগার রয়েছে। ভৌগােলিক অবস্থান ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রকৃতি অনুসারে গ্রন্থাগারের নামেও ভিন্নতা দেখা দেয়। যেমন : জাতীয় গ্রন্থাগার, সাধারণ গ্রন্থাগার, বিদ্যালয় গ্রন্থাগার, গণগ্রন্থাগার, ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার ইত্যাদি।

ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা

গ্রন্থাগারের প্রয়ােজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কখনাে | বিশেষ প্রয়ােজনে, কখনােবা শুধুই মনের খােরাক জোগাতে মানুষ ছুটে যায় গ্রন্থাগারে। একঘেয়ে, ক্লান্ত জীবনে বই এনে দিতে পারে সজীব প্রাণস্পন্দন। গ্রন্থাগারের বিচিত্র সংরক্ষণ থেকে পাঠক সহজেই খুঁজে নিতে পারেন পছন্দের বইটি। ছাত্ররা প্রধানত গ্রন্থাগার ব্যবহার করে পাঠ্যবিষয়ের বই পেতে কিংবা কোনাে বিষয়ের উত্তর খুঁজতে।

গ্রন্থাগার হচ্ছে বইয়ের সংগ্রহশালা
গ্রন্থাগার হচ্ছে বইয়ের সংগ্রহশালা

গবেষক গ্রন্থাগারে আসেন নানা তথ্যের সন্ধানে। শখের পড়ুয়ারা গ্রন্থাগারে আসেন খেয়ালখুশি মাফিক বই পড়ে আনন্দ পেতে। ভালাে বই ভালাে মানুষ গড়তে বিশেষ অবদান রাখে। বই হতে পারে মানুষের নিঃসঙ্গতা কাটানাের বিশেষ বন্ধু। নৈতিক অধঃপতন থেকে মানুষকে টেনে তুলে আনতে পারে ভালাে বই, ভালাে গ্রন্থাগার। বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ এক দুরূহ ব্যাপার। একটি জাতিকে উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমান হিসেবে গড়ে তােলার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার উল্লেখযােগ্য অবদান রাখে। যে জাতির সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার নেই, সে জাতির সমৃদ্ধ ইতিহাসও নেই।

আধুনিক গ্রন্থাগার

আধুনিককালে গ্রন্থাগার বলতে কেবল বই-এর সংগ্রহ বােঝায় না। তা মুদ্রিত, চিত্রসংবলিত, ধারণকৃত, ইলেকট্রনিক কৌশলে সংরক্ষিত সবধরনের যােগাযােগ মাধ্যমের সগ্রহশালাকে বােঝায়। তাই গ্রন্থাগারে এখন বই ছাড়াও ফিল্ম, ভিডিও স্ট্রিপ, অডিও ক্যাসেট, ভিডিও ক্যাসেট, মাইক্রোফিল্ম ইত্যাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বায়নের ফলে ঘরে বসেই আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত সব গ্রন্থাগারের বই, পত্রিকা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারি ।

গ্রন্থাগারের কাজ

প্রত্যেক গ্রন্থাগারে দক্ষ শিক্ষিত ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়ােজিত থাকেন। এঁদের কাজ গ্রন্থাগার ব্যবহারকারীদের সহায়তা করা। গ্রন্থাগারের কর্মীরা প্রধানত যেসব কাজ সম্পাদন করে থাকেন সেগুলি হলাে : বই নির্বাচন ও ক্রয়, বই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় (আক্ষরিক ও বিষয়ভিত্তিক) সাজানাে, গ্রন্থাগার থেকে বই ইস্যু করার ব্যবস্থা, সুনির্দিষ্ট আগ্রহের ক্ষেত্রে পাঠককে পরামর্শ দান প্রভৃতি।

বাংলাদেশে গ্রন্থাগার

আমাদের দেশে সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে ৬৮টি, বেসরকারি গ্রন্থাগারের সংখ্যা। প্রায় ৯০০। সরকারের বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত গ্রন্থাগারগুলাে উল্লেখযােগ্য কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচি ও পুরস্কার প্রদান, গণ-উন্নয়ন পাঠাগারের পরিচালনায় ১৭টি।

ভিন্ন কিছু পোষ্টঃ
নৌকায় ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা সম্পূর্কে জানুন
বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার
গ্রাম্যমেলা-গ্রাম-বাংলার


ফেসবুকে আমরাঃ https://www.facebook.com/likebdcom/

Hasan
প্রযুক্তির সাথে সামনে এগিয়ে যেতে আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা । নিজের জ্ঞানকে মানুষের মাজে শেয়ার করার মাঝে খুজে পাই সুখ । তাই পোষ্ট ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো।