মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য

যাদের সযত্ন লালনপালন ও অকৃত্রিম ভালােবাসায় পৃথিবীতে | আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা, আমাদের সেই অতি আপনজন হলেন মাতাপিতা। পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে বড় বা মাতাপিতা। তাদের দয়া ও ভালােবাসা ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা সব হতাে না। তাঁদের ঋণ কোনােদিন শােধ হওয়ার নয়। তাই পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য অসাম।

মাতাপিতার সীমাহীন অবদান : মাতাপিতা আমাদের জন্মদাতা। তাদের | স্নেহ-ভালােবাসাই ছিল শৈশবে আমাদের একমাত্র সহায়। নিজেদের | সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে তারা আমাদের বড় করে তুলেছেন। সীমাহীন কষ্ট ভােগ করে মা আমাদেরকে গর্ভে ধারণ করেছেন, জন্ম দিয়েছেন। জন্মের পর থেকে নিজের দুধ পান করিয়ে আমাদের সবল করেছেন। বড় হওয়ার পরও তার স্নেহমমতা থেকে আমাদের বঞ্চিত করেননি। নিজে না খেয়ে খাইয়েছেন। আমাদের অসুখ হলে তার দুশ্চিন্তার সীমা ছিল না। চোখের ঘুম হারাম করে রাত জেগে সেবা করেছেন। কীসে আমাদের কল্যাণ হবে এটাই মায়ের সার্বক্ষণিক চিন্তা। ক্ষণিকের জন্য সন্তান চোখের আড়াল হলে মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। যতক্ষণ না সন্তান কাছে ফিরে আসে ততক্ষণ তিনি চিন্তামুক্ত হতে পারেন না। পৃথিবীতে মায়ের মতাে স্নেহময়ী আর কেউ নেই। তাঁর ভালােবাসায় কোনাে তুলনা হয় না। সম্ভান যত বয়ষ্কই হােক না কেন মায়ের স্নেহভালােবাসায় কোনাে পরিবর্তন আসে না। পিতা আমাদের জন্মদাতা। তার সার্বক্ষণিক কর্মকান্ড সন্তানের মঙ্গলের জন্য। আমাদের জীবনকে সুখী ও সুন্দর করার জন্য তিনি কঠোর | পরিশ্রম করেন। তাঁর উপার্জিত অর্থ দ্বারা আমাদের খাওয়া-পরা চলে। আমাদেরকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তােলার জন্যই তার সার্বক্ষণিক | প্রচেষ্টা। জ্ঞানের সুখই তার সুখ। পিতার অকৃত্রিম স্নেহমমতা সন্তানের জন্য আশীর্বাদ। সন্তানের সুখ-দুঃখের চিরন্তন সাথি পিতা। মায়ের মতাে তার ভালােবাসাও অবারিত। মাতাপিতা আমাদের জীবনের পথপ্রদর্শক। অসীম দানের বিনিময়ে তারা আমাদের কাছে কিছুই চান না। সন্তানের সুখ-সমৃদ্ধিই তাদের একমাত্র চাওয়া।

সন্তানের কর্তব্য : মাতাপিতার সীমাহীন ভালােবাসার প্রতিদান দেয়া | কোনাে সন্তানের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাদের প্রতি সন্তানের রয়েছে অসীম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সারাজীবন সেবা করেও তাদের ঋণ শােধ করা সম্ভব | নয়। মাতাপিতার সেবা করে সন্তান কেবল নিজের কর্তব্যটুকু পালন করতে পারে। শিশুকাল থেকেই মাতাপিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য শুরু হয়। পিতামাতার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা সন্তানের কর্তব্য। তাদের | পরামর্শ অনুযায়ী লেখাপড়ায় মনােযােগী হতে হবে। সন্তান যত বড় হয় মাতাপিতার প্রতি তার কর্তব্য তত বাড়ে। মাতাপিতার মনে আঘাত দেয়া, তাদের সেবাযত্নে অমনােযােগী হওয়া এবং তাদের সামান্য অবহেলা করা ক্ষমার অযােগ্য অপরাধ। মাতাপিতাকে অসম্মান করে | কখনই বড় মানুষ হওয়া যায় না। পিতামাতা সারাজীবন আমাদেরকে যেরূপ স্নেহমমতা দিয়ে আগলে রেখেছেন, আমাদেরও সেরূপ শ্রদ্ধা ও | ভালােবাসার সঙ্গে তাদের সেবা করা উচিত। তাদের ভরণপােষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা, অসুখ-বিসুখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আমাদের কর্তব্য। পিতামাতা বৃদ্ধ হলে আমাদের কর্তব্য আরাে বেড়ে যায়। এ সময় সার্বক্ষণিক সেবাযত্নের মাধ্যমে তাদের সুখী রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাদের মনে আঘাত দেয়া কোনােভাবেই উচিত নয়। সন্তানের সাফল্য মাতাপিতাকে গৌরবান্বিত করে। মাতাপিতার সম্মান বৃদ্ধির জন্য সন্তানকে সচেষ্ট হতে হবে। যেসব কাজে তাদের সম্মান নষ্ট হয় সেস কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব : মানুষ মানুষের প্রতি যেসব কর্তব্যের বেড়াজালে আবদ্ধ তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো |মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য। এই কর্তব্যের সঙ্গে মানবজীবন এমনভাবে জড়িত যে, এই কর্তব্যকে অবহেলা করলে মানুষের মনুষ্যত্ববােধ থাকে। মা-বাবার খুশির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মহানবি (স.) বলেছেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তিনি আরাে বলেছেন, পিতার সিষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া সৃষ্টিকর্তা সর্বাগ্রে কবুল করেন। আর তাদের প্রতি দায়িত্বহীন ব্যক্তিকে ভয়াবহ পরিণতিতে নিমজ্জিত করেন। তাই পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার : আমাদের জীবন মাতাপিতার দান। তাদের সেবা করা ইবাদতের শামিল। তাদের সেবা করা প্রতিটি সন্তানের অপরিহার্য দায়িত্ব। যে স্থান এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তার মতাে অমানুষ পৃথিবীতে আর নেই। আমাদের প্রত্যেকের উচিত মাতাপিতার মতাে পরম গুরুজনের প্রতি কর্তব্য পালনে সর্বশ্ব নিয়ােগ করা।

Hasan

Related Posts

পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার

সারা পৃথিবী জুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ-সংকট। মানুষের সৃষ্ট যন্ত্রসভ্যতার গােড়াপত্তন থেকেই চলেছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মারাত্মক পানিদূষণ ও বায়ুদূষণ নিয়ে পরিবেশ-বিজ্ঞানীরা আজ…

Continue reading
বইপড়ার আনন্দ

বইয়ের পৃষ্ঠায় সঞ্চিত থাকে হাজার বছরের সমুদ্র-কল্লোল। বই অতীত আর বর্তমানের সংযােগসেতু। বই জ্ঞানের আধার। একটা ভালাে বই বিশ্বস্ত বন্ধুর মতাে। যুগে যুগে মানুষ তাই বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে,…

Continue reading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

হিরো এক্সট্রিম ১২৫ আর একটি নতুন মোটরসাইকেল মডেল

  • By admin
  • August 21, 2024
  • 750 views
হিরো এক্সট্রিম ১২৫ আর একটি নতুন মোটরসাইকেল মডেল

মন ভালো রাখার কার্যকর কিছু টিপস

  • By admin
  • August 21, 2024
  • 789 views
মন ভালো রাখার কার্যকর কিছু টিপস

ব্রেন ভালো রাখতে করনীয় কি?

  • By admin
  • August 21, 2024
  • 593 views
ব্রেন ভালো রাখতে করনীয় কি?

প্রেম, যা একটি অত্যন্ত গভীর এবং সুন্দর অনুভূতি, তা একটি সম্পর্কের ভিত্তি

  • By admin
  • August 20, 2024
  • 557 views
প্রেম, যা একটি অত্যন্ত গভীর এবং সুন্দর অনুভূতি, তা একটি সম্পর্কের ভিত্তি

Infinix Hot 30 বাংলাদেশ মার্কেটে ঈদের গরম উপহার ইনফিনিক্স এর পক্ষ থেকে

  • By Hasan
  • April 15, 2023
  • 658 views
Infinix Hot 30 বাংলাদেশ মার্কেটে ঈদের গরম উপহার ইনফিনিক্স এর পক্ষ থেকে

Techno Spark 10c এর ফোনের বিস্তারিত জেনে নিন

  • By Hasan
  • March 29, 2023
  • 615 views
Techno Spark 10c এর ফোনের বিস্তারিত জেনে নিন