বইয়ের পৃষ্ঠায় সঞ্চিত থাকে হাজার বছরের সমুদ্র-কল্লোল। বই অতীত আর বর্তমানের সংযােগসেতু। বই জ্ঞানের আধার। একটা ভালাে বই বিশ্বস্ত বন্ধুর মতাে। যুগে যুগে মানুষ তাই বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, বাড়িয়ে নিয়েছে নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার জগৎ। পুস্তকপাঠ মানুষের মনের ভেতর অনেকগুলাে আনন্দময় ভুবন তৈরি করতে পারে। সেই আনন্দময় ভুবনে ডুব দিয়ে সংসারের নানা জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের এই উক্তি ও উপলব্ধি অত্যন্ত খাটি।
বইপড়ার প্রয়ােজনীয়তা : বইপড়ার মাধ্যমে আমরা সত্য, সুন্দর, কল্যাণ, ন্যায়ের শাশ্বত রূপের সাথে পরিচিত হই। এক ঘণ্টার বইপড়া আমাদের ভ্রমণ করিয়ে আনতে পারে বিশ্বজগৎ। চোখের সামনে উদ্ঘাটিত করে দিতে পারে মহাকাশের অজানা রহস্য। বইপড়া আমাদের মনের প্রসার ঘটায়। নির্মল আনন্দ লাভের উৎস হিসেবে বিকল্প কিছু নেই। পারস্যের কবি ওমর খৈয়াম বলেছেন রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালাে চোখ ঘােলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়। কবি ওমর খৈয়াম তাই মৃত্যুর পরেও স্বর্গে গিয়ে যাতে তার পাশে একটি বই থাকে, সেই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি। পৃথিবীর বিপুল বৈচিত্র্যের দিকে তাকালে আমাদের মনে অদম্য কৌতূহল আর অনন্ত জিজ্ঞাসার উদ্রেক হয়। জীবন ও জগতের সান্নিধ্যে এসে মানুষ যে বিপুল জ্ঞান সঞ্চয় করেছে, তা বিধৃত রয়েছে বইয়ের কালাে অক্ষরে। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান, মানবজাতির অগ্রগতির ইতিহাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ইত্যাদি হৃদয়ে ধারণ করতে হলে আমাদের বইয়ের কাছে যেতে হবে। মননশক্তি অর্জন আর হৃদয়শক্তি বিস্তার করতে হলেও প্রয়ােজন বইপড়া।
বইপড়া আনন্দের সেরা উৎস : বিনােদনের হাজার মাধ্যম আছে পৃথিবীতে। কিন্তু সেই বিনােদন অনেক সময় নির্মল হয় না। ভালাে বইয়ের সান্নিধ্য মানুষের অশান্ত মনে এনে দিতে পারে স্বর্গীয় সুখ, হৃদয়ে বইয়ে দিতে পারে আনন্দের বন্যা। প্রিয় কোনাে কবির অমর কাব্যের রসময় পক্তি অমৃতসুধার মতাে লাগে অবসর কোনাে মুহূর্তে। অবসর আর অবকাশের সময়গুলাে আমরা ভরিয়ে তুলতে পারি বইপড়ার আনন্দে।
বইপড়ার আনন্দকে আমরা রাজপ্রাসাদে প্রবেশের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। ধরা যাক, আমি কোনাে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করব। যেখানে আমার জন্য স্তরে স্তরে সাজানাে প্রিয় ফুলের লাবণ্য আছে। সুস্বর পাখিরা ডাকছে মধুর কণ্ঠে। রয়েছে ঈপ্সিত ঝরনার চঞ্চলতা। চন্দনসুগন্ধি ছড়িয়ে আছে চারদিকে। রাজপ্রাসাদের এক এক কক্ষে এক-একরকম আয়ােজন। প্রবেশ করলেই সৌন্দর্যস্রোতে অবগাহন করা যায় । বস্তুত একটি ভালাে বই সুসজ্জিত, আনন্দময় রাজপ্রাসাদের মতােই। জ্ঞানান্বেষী পাঠক হলে তাে কথাই নেই, আনন্দ আর জ্ঞানার্জন— পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুটি কাজ একই সঙ্গে করতে পারবে সে। বিলাসী পাঠক, সিরিয়াস |
পাঠক, অসতর্ক পাঠক, এরকম নানাধরনের পাঠক আছে। আবার কেউ বই পড়ে পরীক্ষায় ভালাে রেজাল্ট করার জন্য, কেউ অস্থায়ী চাকরি স্থায়ী করতে, কেউ বা উচ্চতর পদ বা বেতনের লােভে, কেউ জ্ঞানার্জনের জন্য পড়ে বই। এসব পড়া কাজের পড়া, আনন্দের পড়া নয়। আমার মতে যারা আনন্দের জন্য বই পড়ে, তারাই শ্রেষ্ঠ পাঠক। কারণ, পৃথিবীতে অনুপম শ্রেষ্ঠ আনন্দ কেবল বইপাঠেই পাওয়া যায়।
উপসংহার : বইয়ের পাতার কালাে অক্ষরে অমর হয়ে আছে মানুষের চিরন্তন আত্মার দ্যুতি। বইপড়া মানুষের মনে সঞ্চার করে অনাবিল আনন্দ। মনকে সতেজ ও দৃষ্টিকে প্রসারিত করে বই। ফরাসি দার্শনিক আনাতােল ফ্ৰাস বলেছেন, বইপড়ার মাধ্যমে আমরা মাছির মতাে মাথার চারদিকে অজস্র চোখ ফুটিয়ে তুলতে পারি। সেই চক্ষুপুঞ্জ দিয়ে একসাথে পৃথিবীর অনেককিছু দেখে নিতে পারি। বইপড়ায় যে কত আনন্দ তা গ্রন্থপিপাসু মানুষ মাত্রেই জানেন। সেই আনন্দের স্পর্শ যিনি একবার। পেয়েছেন, তার অন্তর হয়েছে ঐশ্বর্যময়, হয়েছে আলােকিত। সৌন্দর্যময় জগতে অবগাহনের শক্তি আছে। একমাত্র তারই। তিনিই কেবল গাইতে পারেন ‘আলাে আমার আলাে ওগাে আলােয় ভুবন ভরা।
alert(‘Hello! I am an alert box!!’)
alert(“Hello! I am an alert box!!”)
<script>alert(“Hello! I am an alert box!!”)
<script>alert(“Hello! I am an alert box!!”)</script>
Hello
hello
hello