খাবারের পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য আমরা রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করি। তবে অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না, কোন খাবার কীভাবে সংরক্ষণ করব। সবজি-ফল, মাছ-মাংস কিংবা আদা-রসুনবাটা—কোনটা কীভাবে এবং কত দিন রাখতে পারব রেফ্রিজারেটরে, এ নিয়ে মনে নানা সংশয় থাকে। এ সংশয় দূর করতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের অধ্যাপক রীনাত ফৌজিয়া বিভিন্ন ধরনের খাবার সংরক্ষণের বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
এগুলো আমাদের ভালো করে জানা উচিত-
কাঁচা মাছ–মাংস
কাঁচা মাছ বা মাংস অবশ্যই ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে মাছ দুই সপ্তাহ, মুরগি এক মাস এবং গরু ও খাসির মাংস ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। মাছ ও মুরগির মাংস ফ্রিজে ঢোকানোর আগেই পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। খাসি ও গরুর মাংস সাধারণত একটু লম্বা সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয়, তাই এগুলো বাজার থেকে আনার পরপরই রেফ্রিজারেটরে উঠিয়ে রাখলে ভালো। রান্নাকৃত মাছ-মাংস ডিপ ফ্রিজে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
শাকসবজি ভালো থাকবে ৪–৫ দিন
শাকসবজি খুব বেশি দিন তাজা থাকে না। ফ্রিজে চার থেকে পাঁচ দিন খাবার উপযোগী রাখতে পারবেন। সবজি সংরক্ষণ করতে চাইলে বাজার থেকে আনার পরপরই দেখতে হবে কোনগুলো একটু নরম হয়ে গেছে বা খানিকটা পচে গেছে। সেগুলো বেছে আলাদা করে ফেলতে হবে। সবজিগুলো রেফ্রিজারেটরে ঢোকানোর আগে অবশ্যই ভালোমতো ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। সবজি কাগজের প্যাকেটে কিংবা খবরের কাগজ দিয়ে মুড়ে রাখলে অনেক দিন সতেজ থাকে।
ডিম সর্বোচ্চ ১০ দিন
কাঁচা ডিম ফ্রিজে রাখলে ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত গুণগত মান ঠিক থাকে। ফ্রিজ থেকে বের করার পর পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ব্যবহারের আগেই বোঝা যায়, এটি ভালো আছে কি না। পানিতে ভেসে উঠলে ধরে নিতে হবে ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। রান্না করা ডিম ফ্রিজে রাখলেও খুব একটা ভালো থাকে না। নুডলসে ডিম দেওয়া হলে সেই নুডলসও এক দিনের বেশি ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়।
ফল ধুয়ে শুকিয়ে তবেই ফ্রিজে
ফ্রিজে ফলের আলাদা ড্রয়ার আছে। ফল কিনে আনার পর তা ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে সেই ড্রয়ারে সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে তা খেয়ে ফেলাটাই স্বাস্থ্যসম্মত। আনারস বা তরমুজ বাসায় আনার পর ছোট ছোট টুকরা করে বাক্সে ঢুকিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।
দুধ ও দুধের তৈরি খাবার
সাধারণ তাপমাত্রায় তরল দুধ রাখলে তা এক দিন রাখাই ভালো। ডিপ ফ্রিজে দুধ রাখলে খাওয়ার আগে বের করে নিয়ে তরল হলে তা জ্বাল দিয়ে খেতে হবে। দুধের তৈরি খাবারও রান্নার পরই পরিবেশনের জন্য আলাদা করে নিয়ে বাকি অংশ ছোট ছোট বাক্সে রাখতে হবে।
মসলাপাতি এয়ারটাইট বাক্সে
সংসারের রান্নাবান্নার জন্য একসঙ্গে অনেক মসলা বেটে রাখার প্রয়োজন হয়। বাটা মসলা ডিপ ফ্রিজে ১০ থেকে ১২ দিন ভালো থাকে। এমনিতে মসলা ফ্রিজে রাখলে অন্য খাবারেও মসলার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে পেঁয়াজবাটায় ফ্রিজে খুব বাজে গন্ধ ছড়ায়। অন্য খাবারেও ছড়িয়ে পড়ে। তাই রেফ্রিজারেটরে মসলা রাখলেও এয়ারটাইট বাক্সে রাখা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, দিনের পর দিন বাটা মসলা ডিপ ফ্রিজে রেখে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বদলাতে হবে।
এ ছাড়া মাখন ও ঘি অনেক দিন ভালো রাখতে চাইলে এয়ারটাইট পাত্রে ফ্রিজে রাখতে পারেন। গুঁড়া দুধ কিংবা চানাচুর-বিস্কুটের মতো খাবার রেফ্রিজারেটরে একদম সতেজ ও মুচমুচে থাকে। এ ক্ষেত্রেও প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। রেফ্রিজারেটরে সব সময় এক টুকরা কাটা লেবু রাখতে পারেন। মাঝেমধ্যে বেকিং সোডা মেশানো পানি দিয়ে ফ্রিজ মুছে নিতে পারেন। এতে এক খাবারের গন্ধ অন্য খাবারে ঢুকবে না, রেফ্রিজারেটরেও দুর্গন্ধ হবে না।
সূত্রঃ প্রথম আলো