ভূমিকা : মানবজীবনের যে সময়টুকু শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ, মক্তব-মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যােগ্য নাগরিক ও যথার্থ জ্ঞানী করে তােলার কাজে ব্যাপৃত থাকে তাকে ছাত্রজীবন বলে। ছাত্রজীবনকে জীবন সংগ্রামের প্রস্তুতির সময়ও বলা হয়। তাই বৃহত্তর জীবনের পটভূমিতে ছাত্রজীবনের দায়িত্বও কর্তব্য অনেক। ছাত্রজীবনের গুরুত্ব : ছাত্রজীবন হলাে জীবনকে সঠিকভাবে গড়ে তােলার সময়। ছাত্রজীবন মানুষকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তােলে। এজন্য বলা হয়- Student life is the seed time of life. অর্থাৎ, ছাত্রজীবন হলাে জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানাের মধ্য দিয়েই ভবিষ্যতে উন্নতি ও সাফল্য লাভ করা যায়। মানুষের চরিত্র গঠন ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে ছাত্রজীবনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য ছাত্রজীবনের মতাে গুরুত্বপূর্ণ সময় জীবনে আর আসে না। ছাত্রজীবনের কর্তব্য : জীবনকে সুন্দর ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়ােগই একজন ছাত্রের প্রধান কর্তব্য এ জন্য একজন শিক্ষার্থীকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও আরাে অনেক বেশি পড়াশােনা করতে হয়। অর্জন করতে হয় মানবচরিত্রের নানাধিক সৎ গুণাবলি। | যেমন :
১. চরিত্রগঠন : “চরিত্র হচ্ছে মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ।” ছাত্রদের একটি প্রধান কাজ হলাে চরিত্র গঠন। তাই এ সময় প্রত্যেক তেল ছাত্রেরই সত্যবাদিতা, সহানুভূতি, সহযােগিতা, পরােপকার, উদারতা, ধৈর্য, সহ্যম, দেশপ্রেম প্রভৃতি সদ্গুণ আয়ত্ত করতে হবে। সব রকম অসগুণ ও বদ-অভ্যাস থেকে দূরে থাকাও একজন ছাত্রের অন্যতম কর্তব্য।
২. নিয়মানুবর্তিতা: শৃঙ্খলা ছাড়া মানবজীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পরা পারে না। এই শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা ছাত্রজীবনেই অর্জন ফাই করতে হয়। এ গুণ অর্জনের ওপর তার ভবিষ্যতের সাফল্য নির্ভর করে। তাই পরিবারটি সাপ।
৩. সময়ানুবর্তিতা : সময়নিষ্ঠা একটি বড় গুণ। যে মানুষ সময়ের মূল্য দিতে জানে না, সে জীবনে উন্নতি করতে পারে না। তাই চ ছাত্রজীবন থেকেই সময়নিষ্ঠার অভ্যাস করতে হবে, সময়ের মূল্য দিতে হবে।
৪. অধ্যবসায় : ছাত্রদের অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রমী হতে হবে। ই দেখা যায় অনেক মেধাবী ছাত্রও অলসতার কারণে পরীক্ষায় ভালাে ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়। আবার অনেক কম মেধার ছাত্র শুধু অধ্যবসায় ও পরিশ্রম দ্বারা আশাতীত সাফল্য অর্জন করে চমক সৃষ্টি কর। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. খেলাধুলা ও ব্যায়াম : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আর সুস্থ শরীরে বাস করে সুস্থ মন। শরীর সুস্থ না থাকলে নিয়মিত লেখাপড়া হয় না। তাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ছাত্রদের নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়ামচর্চা করা খুব জরুরি।
৬. সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ : ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপশি অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা প্রয়ােজন। বিতর্ক প্রতিযােগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, গান, নাচ, অভিনয় ইত্যাদিতেও তাকে অংশ নিতে হবে।
পারিবারিক জীবরে দায়িত্ব : প্রতিটি ছাত্রকেই পিতামাতার প্রতি | শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাদের কথা মেনে চলতে হবে। বড়দের শ্রদ্ধা ও | ছােটদের স্নেহ করতে হবে। পরিবারের যেকোনাে কাজ নিজের দায়িত্ব | নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। |
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব: ছাত্রজীবনের দায়িত্বের দুটি দিক রয়েছে। একটি | হচ্ছে নিজের জীবনকে যােগ্য করে গড়ে তােলা, অপরটি হচ্ছে দেশ ও | জাতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। নিজেকে যােগ্য করে তােলার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারলেই ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই কল্যাণ হয়। ছাত্ররা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, আশা-আকাঙক্ষার প্রতীক। | শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাই দেশের জাতীয় উন্নয়নে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অতীতে | জাতির সংকটকালে ছাত্রসমাজই অগ্রবর্তী চিন্তার পথিকৃৎ হয়ে এগিয়ে | এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণে ছিল খুবই উল্লেখযােগ্য। ভবিষ্যতেও জাতির সংকটে-সমস্যায় ঝাপিয়ে পড়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার কাজে ছাত্রসমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সাজ | প্রত্যেক ছাত্রকেই মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধা, ভাই-বােন, আত্মীয়স্বজনের | প্রতি ভালােবাসা, পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করতে হবে। সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। শিক্ষক ও গুরুজনদের সম্মান করতে হবে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার সঙ্গে প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
উপসংহার : ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই | ভবিষ্যতের সুদৃঢ় বুনিয়াদ গড়ে তােলা সম্ভব। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে যে যত বেশি সচেতন, ভবিষ্যতে সে তত বেশি উন্নতি লাভ করবে। জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি ছাত্রের উচিত তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া।